কি?
কেন?
কারা ঝুকিতে থাকেন?
করনীয়?
রোগ নির্নয়?
চিকিৎসা পদ্ধতি :
অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন পায়ের গোড়ালির ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। বরাবরের মতো আজকেও পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গোড়ালী ব্যথা কি?
মেডিকেল এর ভাষায় এই অবস্থাটির নাম প্লান্টার ফাসাইটিস। এতে পায়ের তলায় বিশেষ করে হিল বা গোড়ালীতে টন টনে ব্যথা বা খোঁচা দেয়ার মত ব্যথা অনুভূত হয়। এতে সাধারনত সকালে ঘুম থাকে উঠে পা ফেললে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষন হাটা হাটির পর ব্যথা কমে আসে।
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ:
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ জেনে নেয়ার আগে এর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার।আমাদের পায়ের সামনের দিকে কিছু ছোট ছোট হাড়, পেছনের দিকে গোড়ালী বা হিলের একটি হার ( ক্যালকেনিয়াম) এবং মাঝে কিছু হাড় নিয়ে গঠিত। এই হাড় গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে লিগামেন্টস। সামনের এবং পেছনের হারের সাথে একটি ব্যান্ড এর মত জিনিস দিয়ে সংযুক্ত থাকে। যেটাকে বলে “প্লান্টার ফাসা”।
আমাদের শরীরের ওজন যেন সরাসরি আমাদের পায়ের হাড়ের উপরে চাপ প্রয়োগ করতে না পারে এ জন্য এই ব্যান্ড টি আমাদের শক এবজরবার এর মত কাজ করে। এই ব্যান্ডে যদি কোন ইনফ্লামেশন হয় তাহলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। আমাদের শরীরের ওজন বেশি হলে বা দীর্ঘ মেয়াদী কোন চাপ থাকলে এই ব্যান্ড বা ফাসা তে ছোট্ট টিয়ার বা ইঞ্জুরী হয়। প্রথম দিকে ব্যথা কম থাকায় এটা অনুভুত কম হয় এবং হাটাহাটি অব্যাহত থাকে। শুরুর ব্যথা আমলে না নিলে ইঞ্জুরী গভীর হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথায় পরিনত হয়।
কারা এই গোড়ালী ব্যথার ঝুঁকিতে থাকেন?
যদিও কারন ছাড়াও এই ব্যথা হতে পারে। তবে বেশ কিছু ঝুকির কারন আছে। সেগুলো হলো
১. বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর।
২. যে সকল কাজে হিল বা গোড়ালীতে চাপ হয় যেমন: দীর্ঘ সময় দৌরানো, যারা নৃত্য করেন অধিক সময় ধরে।
৩. পায়ের গঠন গত সমস্যা: ফ্লাট ফুট বা সমতল পা। আবার যাদে বেশী উচু আর্চ ( High arch foot) থাকে তাদের ক্ষেত্রে হিলে বা গোড়ালীতে চাপ বেশী পরে।
৪. মোটা শরীর বা ওজন বেশী।
৫. পেশা: যেসব পেশায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয়, যেমন :গার্মেন্টস ওয়ার্কার ও ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার এদের এই সমস্যা হতে পারে।
৬. পুরুষদের থেকে মহিলাদের এই ব্যথার প্রবনতা বেশী থাকে।
৭. যারা আরথ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস এ ভূগছেন।
৮. যারা দীর্ঘ দিন শক্ত হিল বিশিষ্ট জুতা ব্যাবহার করেন।
গোড়ালী ব্যথায় করনীয় কি?
যেহেতু এটা এক ধরনের ইঞ্জুরী তাই যথাযথ বিশ্রাম দিতে হবে পা কে। পা কে উচু কিছুর উপর রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পায়ের ব্যথা যুক্ত জায়গায় বরফ বা আইস প্যাক রাখতে হবে ২০ মিনিট ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর পর।
পা সকালে ও রাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজেয়ে রাখতে পারেন ২০ মিনিট করে।
নিজের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা।
প্রশস্ত আরামদায়ক নিচু হিল বিশিষ্ট নরম জুতা ব্যাবহার করতে হবে।
জুতার ভেতরে ইনসোল বা হিল প্যাড ব্যাবহার করা যেতে পারে।
নিয়মিত আরামদায়ক স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
যে বিষয় গুলো করা যাবে না:
অধিকক্ষন হাটা বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।
হাই হিল বা টাইট পয়েন্টি জুতা ব্যাবহার করা যাবে না।
শক্ত চপ্পল বা স্লিপার ব্যাবহার করা যাবে না।
খালি পায়ে বা শক্ত বা উচু নিচু জায়গায় হাটা যাবে না।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি:
মূলত ব্যথা নিয়ে যারা কাজ করেন সেই সকল চিকিৎসক গন দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। তবে হাড় ভাংগা ও অন্যান্য কারন দূর করার জন্য এক্স রে ও এম আর আই করা যেতে পারে।
গোড়ালী ব্যথায় চিকিৎসা পদ্ধতি :
প্রাথমিক চিকিৎসা
RICE
R- Rest
I – Ice pack
C- Compression
E- Elevation
ঔষধ : প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে ৫-৭ দিন।
দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা :
যে সকল প্লান্টার ফাসাইটিস এর ব্যথা প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতা এর মাধ্যমে না যায় তাদের ক্ষেত্রে ট্রিগার পয়েন্ট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড প্রয়োগ করে ব্যথা কমানো যায়।
ফিজিওথেরাপি: বেশ কিছু ফিজিওথেরাপি এখানে কাজ করে যেমন আল্ট্রা সাউন্ড, ESW থেরাপি ও ম্যাসেজ।
পি আর পি:
দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্লান্টার ফাসাইটিস এর ক্ষেত্রে পি আর পি খুবই ভালো কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিয়ে মেশিনে দিয়ে রক্ত কনিকা আলাদা করে এই পি আর পি তৈরী করা হয়। এই পি আর পি তে প্রচুর পরিমানে গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যা দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষত পূরনে সহায়তা করে। এটি একটি স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি।
গোড়ালী ব্যথায় কার্যকরী কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা বেশ উপকারে আসে। যারা ঝুকীতে আছেন বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন তারা নিয়োমিত কিছু এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে গোড়ালীর এই ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।