অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস (Ankylosing Spondylitis)

Spread the love

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস (Ankylosing Spondylitis) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য :

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস (AS) হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ যা মূলত মেরুদণ্ড (spine) এবং পেলভিস (pelvis)-এর সন্ধিগুলোকে প্রভাবিত করে। এটি প্রধানত মেরুদণ্ডের হাড়গুলোকে (vertebrae) একত্রে গলিয়ে শক্ত করে দেয়, ফলে ব্যথা ও অনমনীয়তা সৃষ্টি হয়। এই রোগটি অটোইমিউন (autoimmune) প্রকৃতির, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের টিস্যুগুলোকে আক্রমণ করে।


লক্ষণসমূহ:

  1. মেরুদণ্ডে ব্যথা ও অনমনীয়তা:

সাধারণত পিঠের নিচের দিকে ব্যথা শুরু হয়।

সকালের দিকে ব্যথা বেশি হয় এবং নড়াচড়ার পর কমে।

  1. শরীরের অন্য অংশে ব্যথা:

কাঁধ, নিতম্ব, হাঁটু বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে।

  1. শরীর বাঁকা হয়ে যাওয়া:

সময়ের সঙ্গে মেরুদণ্ড বাঁকা বা সোজা হয়ে যেতে পারে।

  1. অন্য উপসর্গ:

ক্লান্তি, চোখের প্রদাহ (ইরাইটিস/ইউভাইটিস), শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা।


কারণ ও ঝুঁকিপ্রবণতা:

  1. জিনগত কারণ:

বেশিরভাগ রোগীর শরীরে HLA-B27 জিন থাকে। তবে এই জিন থাকা মানেই রোগ হবে এমন নয়।

  1. লিঙ্গ ও বয়স:

পুরুষদের এই রোগ বেশি হয় এবং সাধারণত ২০-৪০ বছর বয়সে শুরু হয়।

  1. পরিবারের ইতিহাস:

পরিবারের অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বাড়ে।


রোগ নির্ণয়:

  1. রক্ত পরীক্ষা:

HLA-B27 জিন পরীক্ষা।

প্রদাহজনিত প্রোটিন যেমন ESR বা CRP এর মাত্রা।

  1. এক্স-রে বা এমআরআই (MRI):

মেরুদণ্ড এবং পেলভিসের সন্ধিগুলোর ক্ষতি নির্ণয়ে সাহায্য করে।

  1. শারীরিক পরীক্ষা:

মেরুদণ্ড এবং শরীরের গতিশীলতা পরীক্ষা করা হয়।


ব্যবস্থাপনা:

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনের মাধ্যমে রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১. ঔষধপত্র:

এনএসএআইডি (NSAIDs): ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে (যেমন আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক)।

বায়োলজিক থেরাপি: যেমন TNF-অ্যালফা ইনহিবিটার (এটানারসেপ্ট, ইনফ্লিক্সিম্যাব)।

ডিএমএআরডি (DMARDs): প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

স্টেরয়েড: তীব্র প্রদাহে ইনজেকশন বা মুখে গ্রহণ।

২. ফিজিক্যাল থেরাপি:

মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম।

ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শরীরকে সঠিক অঙ্গবিন্যাসে রাখা।

৩. জীবনযাপন পদ্ধতি:

সক্রিয় জীবনযাপন: প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার বা হালকা ব্যায়াম।

সঠিক অঙ্গবিন্যাস: সোজা হয়ে বসা ও দাঁড়ানোর অভ্যাস।

ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ।

৪. ডায়েট ও পুষ্টি:

প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার খাওয়া (যেমন শাকসবজি, ফল, মাছ)।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।


জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ ও মানসিক সহায়তা:

এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় মানসিক চাপ বা হতাশা হতে পারে। তাই রোগীকে মানসিক সমর্থন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং বন্ধু-পরিবারের সহায়তা রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সাহায্য করে।


সতর্কতা:

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস সময়মতো চিকিৎসা না করলে:

মেরুদণ্ড স্থায়ীভাবে শক্ত হয়ে যেতে পারে।

হার্ট, ফুসফুস, বা চোখের সমস্যা হতে পারে।

সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর।

Leave a comment