অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস (Ankylosing Spondylitis) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য :
অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস (AS) হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ যা মূলত মেরুদণ্ড (spine) এবং পেলভিস (pelvis)-এর সন্ধিগুলোকে প্রভাবিত করে। এটি প্রধানত মেরুদণ্ডের হাড়গুলোকে (vertebrae) একত্রে গলিয়ে শক্ত করে দেয়, ফলে ব্যথা ও অনমনীয়তা সৃষ্টি হয়। এই রোগটি অটোইমিউন (autoimmune) প্রকৃতির, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের টিস্যুগুলোকে আক্রমণ করে।
লক্ষণসমূহ:
- মেরুদণ্ডে ব্যথা ও অনমনীয়তা:
সাধারণত পিঠের নিচের দিকে ব্যথা শুরু হয়।
সকালের দিকে ব্যথা বেশি হয় এবং নড়াচড়ার পর কমে।
- শরীরের অন্য অংশে ব্যথা:
কাঁধ, নিতম্ব, হাঁটু বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে।
- শরীর বাঁকা হয়ে যাওয়া:
সময়ের সঙ্গে মেরুদণ্ড বাঁকা বা সোজা হয়ে যেতে পারে।
- অন্য উপসর্গ:
ক্লান্তি, চোখের প্রদাহ (ইরাইটিস/ইউভাইটিস), শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা।
কারণ ও ঝুঁকিপ্রবণতা:
- জিনগত কারণ:
বেশিরভাগ রোগীর শরীরে HLA-B27 জিন থাকে। তবে এই জিন থাকা মানেই রোগ হবে এমন নয়।
- লিঙ্গ ও বয়স:
পুরুষদের এই রোগ বেশি হয় এবং সাধারণত ২০-৪০ বছর বয়সে শুরু হয়।
- পরিবারের ইতিহাস:
পরিবারের অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বাড়ে।
রোগ নির্ণয়:
- রক্ত পরীক্ষা:
HLA-B27 জিন পরীক্ষা।
প্রদাহজনিত প্রোটিন যেমন ESR বা CRP এর মাত্রা।
- এক্স-রে বা এমআরআই (MRI):
মেরুদণ্ড এবং পেলভিসের সন্ধিগুলোর ক্ষতি নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- শারীরিক পরীক্ষা:
মেরুদণ্ড এবং শরীরের গতিশীলতা পরীক্ষা করা হয়।
ব্যবস্থাপনা:
অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনের মাধ্যমে রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১. ঔষধপত্র:
এনএসএআইডি (NSAIDs): ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে (যেমন আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক)।
বায়োলজিক থেরাপি: যেমন TNF-অ্যালফা ইনহিবিটার (এটানারসেপ্ট, ইনফ্লিক্সিম্যাব)।
ডিএমএআরডি (DMARDs): প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
স্টেরয়েড: তীব্র প্রদাহে ইনজেকশন বা মুখে গ্রহণ।
২. ফিজিক্যাল থেরাপি:
মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম।
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শরীরকে সঠিক অঙ্গবিন্যাসে রাখা।
৩. জীবনযাপন পদ্ধতি:
সক্রিয় জীবনযাপন: প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার বা হালকা ব্যায়াম।
সঠিক অঙ্গবিন্যাস: সোজা হয়ে বসা ও দাঁড়ানোর অভ্যাস।
ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ।
৪. ডায়েট ও পুষ্টি:
প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার খাওয়া (যেমন শাকসবজি, ফল, মাছ)।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ ও মানসিক সহায়তা:
এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় মানসিক চাপ বা হতাশা হতে পারে। তাই রোগীকে মানসিক সমর্থন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং বন্ধু-পরিবারের সহায়তা রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সাহায্য করে।
সতর্কতা:
অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস সময়মতো চিকিৎসা না করলে:
মেরুদণ্ড স্থায়ীভাবে শক্ত হয়ে যেতে পারে।
হার্ট, ফুসফুস, বা চোখের সমস্যা হতে পারে।
সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা সম্ভব। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর।